আপনার সাথে একটু গল্প করি?
আমি অপ্রস্তুত হই। এজন্য বাঙালিকে লাই দিতে নেই। বলি, কামাই ভাই, একটা স্কুলে চাকরি করি।
সেদিন ফাইজা বলছিল। জানো, ছোট বেলা থেকে ভাবতাম একদিন জীবনটা খুব সুন্দর হবে। ঠিক রূপকথার গল্পের মত। কিন্তু জীবনটা কখনো রূপকথার গল্পের মত হয় না, কোন রাজকুমার কখনো ঘোড়া ছুটিয়ে আসে না। জীবন চলে সাধারণ মানুষদের নিয়ে। বাস্তবের মানুষগুলো তোমার মত, যাদের উচ্চতা ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি। যাদের আকাশ দেখার সময় হয় না।
ওহ, আপনাদের ফাইজার কথা মনে হয় বলিনি। ফাইজা আমার স্ত্রী। খুব সুন্দরী। বই পড়তে ভালবাসে, নিয়মিত আকাশ দেখে। বিড়বিড় করে কবিতা পড়ে।
সে চায় আমি তার পাশে বসে আকাশ দেখি, মেঘ দেখি। সে নিয়ম করে ছাদে যায়। কিন্তু আমার আর ছাদে যাওয়া হয় না। স্কুলে ক্লাস থাকে ৮ টা থেকে ১২ টা। তারপর নামাজ পড়েই ২ টা থেকে কোচিং। রাত ১০ টা পর্যন্ত। ২ ঘণ্টা করে ৪ টা টিউশন। বেসরকারি স্কুলের বেতন খুব কম। কোচিং না করালে চলে না। আর যে এলাকায় থাকি সেখানে ছাত্রছাত্রীরা মাসে ৫০০ টাকা দিতেই দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। আমিও তাদের কিছু বলি না। কেউ কেউ টাকা দিতেও পারে না।
আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমার ছোট ৩ টা বোন আছে। তাই দায়িত্বটা মুখ বুজে নেই।
ক্লাস করাতে ভালো লাগে না। আগে ছেলেপুলে টিচারদের ভয় পেত। এখন ছেলেপুলেদের ভয় পায় টিচাররা। ঐতো সেদিন, বোর্ডে পিথাগোরাসের উপপাদ্য লিখছিলাম। একজন দাঁড়িয়ে বলল, এই উপপাদ্য শিখে কি হবে স্যার? সাথে সাথে কেউ বলল , নিউটনের মাথায় শক্ত নারিকেল, আর পিথাগোরাসের মাথায় কাঁঠাল পড়া উচিৎ ছিল। আমি তাকিয়ে থাকি। নিজেকে অসহায় লাগে। ক্লাসে একটা হট্টগোল লেগে যায়। কেন যেন মনে হয়, ক্লাস ভর্তি ফাইজা বসে আছে। আসলে তো দোষটা কারো নয়। আমি ফাইজাকে বুঝি না, ফাইজা আমাকে।
অটো তার গন্তব্যে পৌঁছে। দেখি পাশের ছেলেটার চোখে জলের রেখা। আমাকে বলল, ” আমার গল্পটা শোনার জন্য ধন্যবাদ”। আমি হাসি, পুরো পথে ছেলেটা নিজের গল্প বলেছে, আমি একটা অক্ষরও শুনিনি। নিজের জীবনের কথা গুলো ভেবে গেছি। একটু লজ্জা লাগে। পরক্ষণেই মনে হয়, আসলে আমি আর ফাইজা ভিন্ন নই, আমরা আসলে একই রকম। আপনারাও কি নন?
লিখেছেন: সাদমান সাকিব
শিক্ষার্থী, আইআইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
0 মন্তব্যসমূহ
অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়